গণিতঃ তথ্য ও উপাত্ত
পরিসংখ্যান: সংখ্যাভিত্তিক কোনো তথ্য বা ঘটনাকে পরিসংখ্যান বলে।
উদাহরণ: কোনো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী 5 জন প্রার্থীর গণিতের প্রাপ্ত নম্বর হলো 25, 45, 20, 35, 30। এখানে, গণিতে প্রাপ্ত সংখ্যা-নির্দেশিত নম্বরসমূহ একটি পরিসংখ্যান।
তথ্য: কোনো ঘটনা বা বিষয় সম্পর্কিত বিশেষ বর্ণনাকে তথ্য বলে।
উদাহরণ: সাধারণত একজন মানুষের পরিবারে থাকে মা, বা, ভাই-বোন ইত্যাদি। এখানে এটি একটি পরিবারভিত্তিক তথ্য। কিন্তু মনে রাখতে হবে সংখ্যাভিত্তিক কোনো তথ্য হলে সেটা হবে পরিসংখ্যান।
উপাত্ত: কোনো তথ্য বা ঘটনা নির্দেশক সংখ্যাসমূহকে পরিসংখ্যানের উপাত্ত বলে।
উদাহরণ: 50 নম্বরের মধ্যে 5 জন প্রার্থীর প্রাপ্ত নম্বর 45, 35, 20, 40, 32। এটি একটি পরিসংখ্যান এবং নম্বরগুলো পরিসংখ্যানের উপাত্ত।
প্রাথমিক উপাত্ত: যে উপাত্ত সরাসরি উৎস থেকে সংগৃহীত হয় তাকে প্রাথমিক উপাত্ত বলে।
উদাহরণ: 5 জনের বয়স 10, 12, 20, 11, 18। এখানে বয়সের সংখ্যা বা নম্বরগুলো হলো প্রাথমিক উপাত্ত। কারণ, কোনো অনুসন্ধানকারী এই 5 জনের কারো বয়স খুঁজলে সরাসরি এই উৎস থেকে সংগ্রহ করতে পারবে।
মাধ্যমিক উপাত্ত: যে উপাত্ত পরোক্ষ উৎস থেকে সংগৃহীত হয় তাকে মাধ্যমিক উপাত্ত বলে।
উদাহরণ: যদি ঢাকা শহরের গত এক সপ্তাহের প্রতিদিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা জানা প্রয়োজন হয় সেক্ষেত্রে আমরা কোনো প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রকাশিত বা সংগৃহীত উপাত্ত আমাদের প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারি। অতএব, এখানে উৎস পরোক্ষ বলে এটি মাধ্যমিক উপাত্ত।
বিন্যস্ত উপাত্ত: যেসকল উপাত্ত মানের উর্ধ্বক্রম বা অধক্রম অনুসারে সাজানো থাকে তাকে বিন্যস্ত উপাত্ত বলে। উদাহরণ: 1 থেকে 5 পর্যন্ত সংখ্যাগুলো ক্রমান্বয়ে লিখলে আমরা পাই, 1, 2, 3, 4, 5 । এই উপাত্তগুলো বিন্যস্ত।
অবিন্যস্ত উপাত্ত: যেসকল উপাত্ত মানের উর্ধ্বক্রম বা অধক্রম কোনো ক্রমেই সাজানো থাকে না তাকে অবিন্যস্ত উপাত্ত বলে।
উদাহরণ: 1 থেকে 5 পর্যন্ত সংখ্যাগুলো এলোমেলোভাবে লিখলে পাই, 5, 3, 1, 2, 4 । এই উপাত্তগুলো অবিন্যস্ত।
শ্রেণিবিন্যাস: যে বিন্যাসের মাধ্যমে অবিন্যস্ত উপাত্তসমূহ অতিসহজে বিন্যস্ত উপাত্তে রূপান্তর করা যায় এবং গণসংখ্যা সারণির সাহায্যে উপস্থাপন করা হয় তাকে শ্রেণিবিন্যাস বলে।
গণসংখ্যা নিবেশন সারণি: কোনো পরিসংখ্যানের উপাত্তগুলোকে উপস্থিতি সংখ্যার ভিত্তিতে একটি ছক আকারে বিন্যস্ত করলে তাকে গণসংখ্যা নিবেশন সারণি বলা হয়।
গণসংখ্যা নিবেশন সারণি তৈরির ধাপসমূহ:
১. পরিসর নির্ণয় ২. শ্রেণিসংখ্যা নির্ণয় ৩. শ্রেণিব্যাপ্তি নির্ধারন ৪. ট্যালি চিহ্নের সাহায্যে গণসংখ্যা নির্ণয়।
পরিসর: কোনো উপাত্তের সর্বোচ্চ সংখ্যা থেকে সর্বনিম্ন সংখ্যা বিয়োগ করে এক যোগ করলে যে সংখ্যামান পাওয়া যায় তাকে ঐ উপাত্তের পরিসর বলে।
অর্থাৎ পরিসর= (সর্বোচ্চ সংখ্যা – সর্বনিম্ন সংখ্যা) +1
উদাহরণ: ৫ জনের বয়স হলো: 10, 11, 14, 8, 9। এখানে, উপাত্তের সর্বোচ্চ সংখ্যা 11 এবং সর্বনিম্ন সংখ্যা 8
অতএব, এই উপাত্তের পরিসর = (11-8)+1=3+1=4
শ্রেণিব্যাপ্তি: যেকোনো শ্রেণির উর্ধ্বসীমা ও নিম্নসীমার ব্যবধান হলো সেই শ্রেণির শ্রেণিব্যাপ্তি।
উদাহরণ: 10-20 হলো একটি শ্রেণি, এখানে, সর্বনিম্ন মান 10 এবং সর্বোচ্চ মান 20 তাহলে শ্রেণিব্যাপ্তি হবে (20-10)+1=10+1=11
শ্রেণিসংখ্যা: কোনো উপাত্তের পরিসরকে যতগুলো শ্রেণিতে ভাগ করা হয় এর সংখ্যাকে শ্রেণিসংখ্যা বলে।
অর্থাৎ শ্রেণিসংখ্যা = পরিসর ÷ শ্রেণিব্যাপ্তি
ট্যালি চিহ্ন: যেসব রেখাচিহ্নের সাহায্যে পরিসংখ্যানের উপাত্তগুলোর সংখ্যার মানকে প্রকাশ করা হয় তাদেরকে ট্যালি চিহ্ন বলা হয়।
গণসংখ্যা: কোনো শ্রেণিতে যতগুলো ট্যালি চিহ্ন আছে তার সংখ্যামানকে গণসংখ্যা বলে। যদি কোনো শ্রেণিতে ট্যালি চিহ্ন হয়  তাহলে এর গণসংখ্যা হবে দুই।
আয়তলেখ: ছক কাগজে x-অক্ষ বরাবর শ্রেণিব্যাপ্তি এবং y-অক্ষ বরাবর গণসংখ্যা নিয়ে যে লেখচিত্র আঁকা হয় তাকে আয়তলেখ বলে। অর্থাৎ আয়তের ভূমি হয় শ্রেণিব্যাপ্তি এবং উচ্চতা হয় গণসংখ্যা।
পাইচিত্র: পরিসংখ্যানে ব্যবহৃত সকল উপাত্তের সমষ্টিকে একটি বৃত্ত কল্পনা করে প্রতটি অংশকে নিজ অনুপাত অনুসারে বৃত্তের অংশ হিসেবে উপস্থাপন করলে যে লেখচিত্র পাওয়া যায় তাকে পাইচিত্র বলে। বৃত্তের কেন্দ্রে সৃষ্ট কোণের মান  হয়, তাই পাইচিত্রেও কেন্দ্রে  কোণ উৎপন্ন হয়। এজন্য পাইচিত্রকে বৃত্তলেখও বলা হয়।
কেন্দ্রীয় প্রবণতা: মাঝামাঝি বা কেন্দ্রে মানের দিকে মানের দিকে উপাত্তসমূহের পুঞ্জিভূত হওয়ার প্রবণতাকে কেন্দ্রীয় প্রবণতা বলে। কেন্দ্রীয় প্রবণতার পরিমাপ হলো (১) গাণিতিক গড় বা গড় (২) মধ্যক (৩) প্রচুরক।
গাণিতিক গড়: উপাত্তসমূহের সংখ্যাসূচক মানের সমষ্টিকে যদি উপাত্তসমূহের সংখ্যা দিয়ে ভাগ করা হয়, তবে গাণিতিক গড় পাওয়া যায়।
অর্থাৎ গাণিতিক গড় = উপাত্তসমূহের সমষ্টি ÷ উপাত্তের সংখ্যা
মধ্যক: উপাত্তগুলোকে মানের ক্রমানুসারে সাজালে যে মান উপাত্তগুলোকে সমান দুই ভাগে ভাগ করে তাকে উপাত্তগুলোর মধ্যক বলে। উদাহরণ: কতগুলো সংখ্যা 7, 9, 5, 12, 2, 10, 15 । এদের সমান দুই ভাগে ভাগ করে পাই,
2, 5, 7, 9, 10, 12, 15
অতএব, এখানে 9 হলো মধ্যক।
প্রচুরক: পরিসংখ্যানের উপাত্তগুলোর মধ্যে যে সংখ্যাটি সবচেয়ে বেশি থাকে তাকে প্রচুরক বলে। উদাহরণ: প্রদত্ত উপাত্ত: 5, 10, 9, 8, 10, 12, 14, 10, 8 । উপাত্তটিতে 10 আছে তিনবার, 8 আছে দুইবার এবং বাকিগুলো একবার করে আছে।
সুতরাং প্রদত্ত উপাত্তগুলোর প্রচুরক 1